সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি

সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল। পেঁপে গাছ লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট হয়। প্রায় কমবেশি সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল । কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু ভাবেই পেঁপে খাওয়া যায়, তরে কাঁচা অবস্থায় সব্জি এবং পাকলে ফল।


পেঁপে চাষে করনীয়:
জলবায়ু অনুসারে আমাদের গ্রীষ্মকালের ফসলগুলোর মধ্যে পেঁপে অন্যতম এবং চাষাবাদের জন্য এ সময়টাই হচ্ছে ভালো সময়। এ ছাড়া সারা বছরই পেঁপে চাষ করা যায়। জমিতে এবং বাড়ির সামান্য পরিসরে লাগাতে পারেন এ সবজি বা ফলটি। আমাদের দেশে অনেক জাত রয়েছে, তা থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার প্রিয় জাতটি। তবে পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।
পেঁপের জাত প্রকরণ:
পেঁপে বিভিন্ন জাতের হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতি পেঁপে জাতগুলি হলো -
১.ব্লুস্টেম, 
২.কাশিমপুরী, 
৩. যশোরি,
৪.রাচি,
৫.নউন ইউ, 
৬.হানি ডিউ, 
৭. ছোট পেঁপে, 
৮. শাহী পেঁপে, 
৯. শঙ্কর জাত।
মাটি নির্বাচন:
বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বিভিন্ন রকম আর মাটির গুনাগুণও আলেদা। তবে ভালো পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।
আইল নির্বাচন:
দৈঘ্য ২২ মিটার, প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া দরকার। উঁচু, চওড়া আইল পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ২ মিটার রাখতে হবে এবং মাদার আয়তন ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার। উঁচু জায়গার আকার ৪৫×৪৫×৪৫ সেন্টিমিটার ।
চারার পরিমাণ ও চারা রোপণের সময়: 
প্রতি মাদায় ৩টি চারা ৩ কোণ আকারে রোপণ করতে হবে।দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি গর্তে ৩ টি করে চার রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।
সার ব্যবস্থাপনা:
প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাচে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।
আগাছা পরিষ্কার ও সেচ প্রদান:
পেঁপে জমির আইলে আগাছা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে। শীতকালে প্রতি ১০-১২ দিন এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৭ দিন পর পর সেচ দেয়া প্রয়োজন।
পুরুষ গাছ এবং গাছ পাতলা করা:
চারা রোপণের ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি মাত্র পুরুষ গাছ রেখে দিয়ে, বাকি পুরুষ গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে। প্রতি মাদায় উঁচু জায়গায় একটি করে স্ত্রী পেঁপে গাছ রাখতে হবে।
খুঁটি দেয়া:
বেশি ফল ধরলে বা ঝড়ের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে হলে শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে গাছের কান্ডের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:
ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়। সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা:

 রোগের নাম:
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে। ক্ষতির নমুনা:
এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।

অনুকূল পরিবেশ:
বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা:
গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।

ফল সংগ্রহ :
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। পেঁপে অল্প সময়ে ফল দেয় এবং প্রায় সারা বছরে পেঁপে গাছে ফল ধরে, এজন্য অনেক দিন ধরে সময় অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয় না। পেঁপে কাঁচা ও পাকাতেই দুই খাওয়া যায় বলে বাজারে পেঁপে অনেক চাহিদা। এজন্য পেঁপে চাষ করে অনেক লাভবান হয়া যায়।




COMMENTS

BLOGGER
নাম

আউটসোর্সিং,7,কৃষি টিপস,2,কৃষি তথ্য সেবা,6,খাদ্য ও পুষ্টি,4,খেলাধুলা ও বিনোদন,1,গর্ভধারণের প্রস্তুতি,1,গর্ভাবস্থা,7,চাষাবাদ,2,পরামর্শ,1,বেড়ানো,2,ব্লগার,7,মা বিভাগ,12,মুরগি পালন ও চিকিৎসা,2,রেসিপি,5,রোগ ও প্রতিকার,1,লাইফস্টাইল,6,শিশু বিভাগ,8,শিশুদের টিকা,2,সপ্তাহ অনুযায়ি গর্ভাবস্থা,3,স্বাস্থ্য পরামর্শ,6,স্বাস্থ্য বিভাগ,20,
ltr
item
Required Information : সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি
সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি
সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল। পেঁপে গাছ লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট হয়। প্রায় কমবেশি সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল । কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু ভাবেই পেঁপে খাওয়া যায়, তরে কাঁচা অবস্থায় সব্জি এবং পাকলে ফল।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgKXKHNQQrqv0OcpGeHcXRrpFT9FCGTyeFHF1jYMw96edKH89aa9cE2YioohOp39W4py5mixvhPWfeIvv0r9_jePsoI3b1Ay8BYm7Yn5kWo-E1g2u85EoBQVPQf_f73THDQ1TMJFmoV6xg0/s320/images+%252813%2529.jpeg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgKXKHNQQrqv0OcpGeHcXRrpFT9FCGTyeFHF1jYMw96edKH89aa9cE2YioohOp39W4py5mixvhPWfeIvv0r9_jePsoI3b1Ay8BYm7Yn5kWo-E1g2u85EoBQVPQf_f73THDQ1TMJFmoV6xg0/s72-c/images+%252813%2529.jpeg
Required Information
https://bdrinfo.blogspot.com/2020/02/blog-post_41.html
https://bdrinfo.blogspot.com/
https://bdrinfo.blogspot.com/
https://bdrinfo.blogspot.com/2020/02/blog-post_41.html
true
6374902555142089673
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy